সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা বিস্তারিত বিশ্লেষণ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আপনি যদি উদ্বিগ্ন হন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলটিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কি কি সুবিধা ও অসুবিধা আছে তার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই এর সুবিধা এবং অসুবিধা কোনগুলো হতে পারে তা জানতে আগ্রহী হন। আপনাদের সুবিধার্থেই এই আর্টিকেল, যাতে আপনারা খুব সহজেই সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পারেন।
পেজ সূচিপত্রঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা বিস্তারিত বিশ্লেষণ
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা গুলো জেনে নিই
- তথ্য ও জ্ঞান ভান্ডার এর ভূমিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
- যোগাযোগ স্থাপন সহজ করছে সোশ্যাল মিডিয়া
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পৃথিবীটাকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়
- দ্রুততম প্রচার মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অসুবিধা গুলো জেনে নিই
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়া
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার বিস্তার
- শেষ কথাঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা দুটিই রয়েছে। আমরা জানি, যে কোন জিনিসের একটি ভালো এবং একটি খারাপ দিক থাকে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তার ব্যতিক্রম নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরও ভালো এবং খারাপ উভয় দিক-ই রয়েছে। তবে এটি নির্ভর করে ব্যবহারকারী কিভাবে ব্যবহার করছেন তার উপর। ব্যবহারকারী যদি এটিকে ভালো কাজে ব্যবহার করেন তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের বিভিন্ন উপকারে আসবে। কিন্তু কেউ যদি এর অপব্যবহার করে বা একে খারাপ কাজে ব্যবহার করে তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অসুবিধার সৃষ্টি হবে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
তাহলে বলা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভালো বা খারাপ নয়, বরং এর ব্যবহারকারীর উপরে নির্ভর করে এটি খারাপ ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে নাকি ভালোভাবে ব্যবহার হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো আমাদের যে কারণে জানা প্রয়োজন তা হলো, আমরা যাতে করে খারাপ দিক গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি। এবং ভালো দিক গুলোর সৎ ব্যবহার করতে পারি। আমরা যদি না জানি এর ভালো দিকগুলো কোনগুলো তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুফল আমরা পাবো না। আবার যদি এটাও না জানি যে, খারাপ দিকগুলো কোনগুলো তাহলে আমরা যেকোনো সময় আমাদের অজান্তেই খারাপ কোন কাজে এটিকে ব্যবহার করে ফেলতে পারি। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা গুলো জেনে নিই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা গুলো বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক সহজ করে ফেলেছে। এর অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে যার সবগুলো হয়তো এই ব্লগ পোস্টে বলা সম্ভব নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ যে সুবিধাগুলো রয়েছে সেগুলো আমি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এগুলো থেকে আপনাদের উপকার হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এখান থেকে বিভিন্ন প্রকার তথ্য আমরা বিভিন্ন সময় পেয়ে থাকি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের পুরো পৃথিবীটাকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ বানিয়ে ফেলেছে। যেখানে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্ব কোন দূরত্ব নয়। যেখানে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করা দুজন মানুষ খুব কম সময়ের মধ্যে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করে ফেলতে পারে। যা আগে কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু এখন তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিদিনই প্রসার লাভ করছে। প্রতিদিন নতুন ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসা যাক।
তথ্য ও জ্ঞান ভান্ডার এর ভূমিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
তথ্য ও জ্ঞান ভান্ডারের ভূমিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি সুফল বা সুবিধা। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। সারা পৃথিবীতে কি কি ঘটে গেল বা কি ঘটতে পারে তা আমরা মুহূর্তের মধ্যে জানতে পারি। আমরা জানতে পারি বিভিন্ন গবেষণা, একাডেমিক লেখাপড়া সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি। এ সকল বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পেয়ে থাকি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কমিউনিটি কিংবা বড় কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষা কার্যক্রমের অনেক রিসোর্স সংগ্রহ করতে পারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার করে সারা পৃথিবীর মানুষ একটি প্লাটফর্মে অবস্থান করে। সুতরাং বিভিন্ন ধরনের মানুষ বিভিন্ন ধরনের তথ্য এবং উপাত্ত এর মধ্যে দিয়ে থাকে। আমরা তথ্য এবং উপাত্ত এই দুটি থেকে জ্ঞান আহরন করে থাকি। এ ছাড়াও সারা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ধরনের সায়েন্স ফেয়ার, রোবটিক্স কম্পিটিশন কিংবা গবেষণা পত্র সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্ট সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সহজে জানতে পারি।
যোগাযোগ স্থাপন সহজ করছে সোশ্যাল মিডিয়া
যোগাযোগ স্থাপনে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একসময় যোগাযোগ মানুষের জন্য অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার ছিল। কারণ তখন যানবাহনের প্রচলন কম ছিল। এছাড়া প্রযুক্তি তখনও মানুষের হাতে খুব একটা পৌঁছায়নি বা অনেকগুলো তখনো উদ্ভাবন হয়নি। যে কারণে তখন যোগাযোগ করাটা ছিল অনেকটা কষ্টের বিষয়। তখনও মানুষ বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করত। যেমন চিঠির মাধ্যমে, কবুতরের পায়ে চিরকুট বেধে ইত্যাদি। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করে যোগাযোগ করতো মানুষ তখন। তবে এখন আর সেই যুগ নেই। বর্তমানে যুগের পরিবর্তন হয়েছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা খুব সহজেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, একজন বাংলাদেশে বসবাস করে, এবং তার খুব নিকট আত্মীয় সৌদি আরবের প্রবাসী। এক্ষেত্রে আগে কি হতো? আগে তারা সহজে যোগাযোগ করতে পারত না। ল্যান্ড ফোন বা টেলিফোন ব্যবহার করতে হতো। যার ব্যয় অত্যন্ত বেশি ছিল। হয়তো মাসে দুই একবার কথা বলা হতো কি হতো না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যোগাযোগ করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। শুধু কথা বলতে পারছে এমন নয়, সাথে সাথে ভিডিও কলে তাকে দেখাও সম্ভব হচ্ছে। এই যে পরিবর্তন, এর পেছনে কাজ করছে সোশ্যাল মিডিয়া।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পৃথিবীটাকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পৃথিবীটাকে একদম হাতের মুঠোয় নিয়ে চলে এসেছে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীটাকে বলা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। পুরো পৃথিবীটাই যেন একটি গ্রামের মতো হয়ে গেছে। একটি গ্রামে বসবাস করলে গ্রামের সকল মানুষের সাথে যেমন প্রতিদিন দেখা-সাক্ষাৎ হয়। চায়ের আড্ডা হয় বা তাদের খোঁজখবর নেয়া যায়। তেমনি সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর পুরো পৃথিবী যেন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। আমরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের মানুষের খবর খুব সহজে নিতে পারছি। তাদের সাথে আড্ডা দিতে পারছি। তাদের সাথে মজা করতে পারছি। সুখ, দুঃখ, বেদনা ইত্যাদি ভাগাভাগি করে নিতে পারছি। তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি।
তাহলে এখানে তো একটি গ্রামের মতোই হয়ে গেল তাই না? এই জন্যই বলা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পুরো পৃথিবীটাকেই যেন আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে চলে এসেছে। আমরা বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দেখতে পাই। কেউ হয়তো আনন্দের পোস্ট দিয়েছে, কেউ হয়তো দুঃখের পোস্ট দিয়েছে, কেউ হয়তো তাদের সমস্যার কথা বলছে। একসময় গ্রামের মানুষজন এক জায়গায় বসলে সবার বিষয়ে আলোচনা হতো, একজন আরেকজনের বিষয়ে জানতে পারত। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একই কাজই হচ্ছে কিন্তু তা পুরো পৃথিবী জুড়ে। পৃথিবী টা এখন খুবই ছোট হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে।
দ্রুততম প্রচার মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার
দ্রুততম প্রচার মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা যে কোন তথ্য খুব সহজে এবং দ্রুত প্রচার করতে পারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে। কোন একটি বিষয় আমরা প্রচার করতে চাইলে কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে। যেমন আমরা বিজ্ঞাপন দিতে পারি। বিজ্ঞাপন আমরা খবরের কাগজে, টিভিতে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে পারি। তবে বর্তমান সময়ে সকল বয়সের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকে। যে কারণে অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশি ব্যাবহার উপযোগী।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে ফ্রি টাকা ইনকাম করা যায়
চলুন আমরা একটু উদাহরণ এর মাধ্যমে জেনে আসি কোন মাধ্যমে সব থেকে দ্রুত প্রচার করা সম্ভব। ধরুন একটি জায়গায় একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনার খবর কয়েকটি মাধ্যমে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। একটি মাধ্যম হচ্ছে টিভি চ্যানেলে নিউজ এর মাধ্যমে। নিউজের মাধ্যমে আমরা এই খবর ছড়িয়ে দিতে পারি, কিন্তু সবাই কি সবসময় নিউজ দেখে? সব সময় টিভির সামনে বসা হয় না। আবার খবরের কাগজের মাধ্যমে আমরা এটি প্রচার করতে পারি। তবে খবরের কাগজ একটি নির্দিষ্ট সময় পর প্রিন্ট করা হয় এবং এটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার সবাই খবরের কাগজ পড়েও না।
কিন্তু আমরা যদি এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিই তাহলে কি হতে পারে? বিষয় হলো সব বয়সের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। দিনের অনেকটা সময় এ সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ সময় ব্যয় করে। ছোট থেকে বড় সকল বয়সী মানুষই কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিংবা অবসর সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া চালাই। সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দুর্ঘটনার খবরটি প্রচার করা হলে, খুব সহজে এই তথ্য বা দুর্ঘটনার খবরটি অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। তাহলে এখানে আমরা যে তিনটি মাধ্যম দেখলাম, তার মধ্যে কোন মাধ্যমটি সবথেকে দ্রুত প্রচার করতে পারছে? নিশ্চয়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অসুবিধা গুলো জেনে নিই
প্রত্যেকটি বিষয়েরই ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই থাকে। প্রযুক্তির আবিষ্কার মানুষের উপকারের জন্য হলেও এর কিছু খারাপ দিক রয়েছে। সেরকমই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরও কিছু অসুবিধা রয়েছে। যদিও এই অসুবিধাগুলো ব্যবহারকারীর উপরে নির্ভর করে, তবুও কিছু অসুবিধা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রয়েছে বলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে কিছুটা সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অসুবিধাগুলো হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো, মানুষ এতে যদি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গোপন তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করা হচ্ছে। এই দিকগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অসুবিধার মধ্যেই পড়ে। এগুলো যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিজে করছে তা কিন্তু না। এগুলোর পেছনে দায়ী এর ব্যবহারকারী অর্থাৎ আমরা মানুষেরা।সুতরাং আমাদের কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়া বলতে গেলে বোঝানো হয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পিছনে ব্যয় করা। বর্তমান সময় আমরা দেখতে পাই, আমরা একটু সুযোগ পেলেই বা অবসর পেলেই হাতে ফোনটা নিয়ে সরাসরি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে প্রবেশ করি। কারন আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সোশ্যাল মিডিয়া আমরা বিভিন্ন কারনে ব্যাবহার করি। আমরা যোগাযোগের কাজে ব্যাবহার করি, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখার জন্য ব্যাবহার করি, বিভিন্ন মানুষের পোস্ট দেখি ইত্যাদি।
তবে এর একটি লিমিটেশন রয়েছে। আমরা যদি প্রয়োজনের বেশি বা খুব বেশি সময় এই সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যয় করে ফেলি তাহলে আমরা আসক্তির দিকে চলে যাব। একসময় আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপরে আশক্ত হয়ে পড়বো। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে। এবং আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। বর্তমান সময়ে শিশুরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা সোসাল মিডিয়াতে অনেক সময় ব্যায় করছে এতে তাদের লেখাপড়া সহ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকে প্রভাবিত করছে। সুতরাং এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটানো হচ্ছে। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালু করলে বিভিন্ন বিষয় আমাদের সামনে চলে আসে। যেমন: কোনো একজন মানুষের বিরুদ্ধে অপমানজনক বা মানহানিকর কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ছবি প্রকাশ করা হয় ছবির মালিকের অনুমতি ব্যাতিত। বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করা হয়। অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
অনেকে পণ্য বিক্রি বা বিভিন্ন ব্যবসার কথা বলে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে। টাকা নেওয়ার পরে আর তার কাছে পন্য পৌঁছে দেয় না। অনেকে অনৈতিক বা অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। যা সামাজিক অবক্ষয় এর মূল কারণ। বিভিন্ন ফিশিং লিংক দিয়ে হ্যাকাররা বিভিন্ন মানুষের ব্যাক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নেয় এবং এর মাধ্যমে তাদের ব্যাক্তিগত তথ্য চুরি করে নেই। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিশিং লিঙ্ক প্রদান করার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে। এরপর তার পরিচিত মানুষজনের কাছে অর্থ সহযোগিতা চেয়ে থাকে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটে থাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার বিস্তার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বর্তমান সময়ে অনলাইন জুয়া প্রচুর পরিমাণে বিস্তার লাভ করছে। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে জুয়া খেলা হয়। তো এগুলোর বিস্তার বা প্রচার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেহেতু প্রচুর মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, এক্ষেত্রে তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালায়। বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার দিয়ে তারা মানুষকে আকৃষ্ট করতে চায়। কিছু মানুষ তাদের ফাঁদে পা দিয়ে দেয় ফলে তারা অনেককে আকৃষ্ট করে ফেলে।
আরো পড়ুনঃ বাংলা আর্টিকেল লিখার নিয়ম সমূহ
অনলাইন জুয়া বর্তমান সময়ে মাথাব্যথার কারণ। জুয়া খেলা কখনোই ভালো কাজ নয়। এটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন খারাপ কাজ, তেমনি আইনগতভাবেও এর বৈধতা নেই। জুয়া একটি পরিবারকে শেষ করে দিতে পারে। যে পরিবারে একজন মানুষ জুয়ায় আসক্ত সে পুরো পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বা সাময়িক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী অনেকেই ভিভিন্ন লোভে এই জুয়ার নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। আর এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জুয়ার বিস্তার ঘটে চলেছে।
শেষ কথাঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা এ বিষয়ে আপনাদের অনেক কিছু জানানোর চেষ্টা করলাম। উপরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, আশা করি আপনারা সুবিধা ও অসুবিধা গুলি সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা পেয়েছেন। তবে শুধু ধারণা পেলেই হবে না, আমাদের সুবিধা গুলোকে নিতে হবে এবং অসুবিধার যে দিকগুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সাবধান এবং সচেতন থাকতে হবে। আর অন্যদের কেউ সচেতন করতে হবে। তবেই আমরা একটি সুস্থ এবং স্বাভাবিক বসবাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবো। সোশ্যাল মিডিয়াকে অভিশাপ নয় আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
আমরা সবাই চেষ্টা করব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আমাদের যে সকল উপকার হয় সেগুলোকে গ্রহণ করতে। অভিভাবকেরা খেয়াল রাখবেন যেন, বাচ্চারা যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আসক্ত না হয়ে যায়। এবং আপনারাও এর আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। যাহোক আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। এছাড়া “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা”- এ সম্পর্কে যে কোনো মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্টে বক্সে প্রকাশ করুন। এমন আরও প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত বাংলা আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।



ইনফোটেক অ্যাডভাইজারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url